যখন আপনি নেটে কারো সাথে চ্যাট করেন কিংবা কাউকে মেইল পাঠান তখন কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে এই কাজ গুলো সম্পূর্ণ হতে কতোগুলো আলাদা কম্পিউটার একসাথে কাজ করছে ? আপনি টেবিলে আপনার কম্পিউটার নিয়ে বসে আছেন, আর আরেক প্রান্তে আপনার বন্ধু কম্পিউটার নিয়ে প্রস্তুত হয়ে বসে আছে আপনার সাথে কানেক্ট হওয়ার জন্য। এটা কিভাবে সম্ভব হয় !
আপনার বার্তা টি আপনার বন্ধুর কাছে পৌছে দিতে সাহায্য করছে আরও অনেক গুলো কম্পিউটার । কিন্তু এগুলো একটার সাথে আরেক টার সম্পর্ক কিভাবে ঘটে ! হ্যাঁ ঠিক ই অনুমান করেছেন সেটা হচ্ছে ইন্টারনেট । পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত আর কৃতিত্ব ইন্টারনেটের। গত দুই দশকে মোটামুটি দুইশত দশটির বেশি দেশে তার সম্প্রসারণ ঘটেছে । পৃথিবীর অনেক গরীব দেশও এর জালে আটকা পড়েছে।
আমরা সবাই মনে করি ইন্টারনেট মানে অনলাইনে চলে যাওয়া , আসলে ব্যপার টা এমন নয় । আপনাকে ঢাকা যেতে হলে ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে গাড়ি নিয়ে নামতে হবে , ঠিক সেভাবে বিশ্বের আরেক প্রান্তে ইমেইল পাঠাতে হলে বৈশ্বিক রাস্তায় নামতে হবে যার নাম হচ্ছে ইন্টারনেট , এই ইন্টারনেট হচ্ছে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত হওয়া । যেমন মনে করুন আপনি ফেইসবুক চালাচ্ছেন , এক্ষেত্রে আপনি আপনার ডিভাইসের সাথে ফেইসবুকের হেডকোয়াটারের কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট হয়েছেন , ঠিক এভাবে আরও ১.৫ বিলিয়ন মানুষ আপনার মত ফেইসবুকের কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট হয়েছেন , যা ফলে ফেইসবুকে থাকা যে কারো সাথে আপনি ভাব আদান প্রদান করছেন । ফেইসবুক আপনার ভয়েস ম্যাসেজ কে ডাটায় রুপান্তরিত করে তার কম্পিউটারের মাধ্যমে আপনার বন্ধুর কম্পিউটারে প্রেরণ করছে । এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ফেইসবুক ই কি ইন্টারনেট ? উত্তরঃনা।
ফেইসবুক নিজে দেড় বিলিয়ন মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য ইন্টারনেটের সাথে কানেক্ট হয়েছে ।
বিভিন্ন উপায় আছে একটি কম্পিউটারের সাথে আরেকটি কম্পিউটারের সংযোগ পাওয়ার।অনেক কম্পিউটার পুরাতন কপার ক্যাবলের মাধ্যমে আবার এখন বেশির ভাগ ফাইবার অপটিক ক্যাবল যা আলোর স্পন্দনের সাহায্যে বারতা/ডাটা আদান প্রদান করে । আবার কোন কম্পিউটার গুলো বেতার কানেকশনে যুক্ত থাকে [বেতার কানেকশান মানে আমরা যাকে ওয়্যারলেস বুঝি, এটি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে] এবং কোন কম্পিউটার গুলো কৃত্তিম উপগ্রহের সাথে সংযুক্ত থাকে।এইভাবেই আমরা উপভোগ করতে পারি ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজ সুবিধা, ইমেইল সেবা, অথবা ডাউনলোড করি এমপিথ্রী মিউজিক ফাইল। ইন্টারনেটের কাজ হচ্ছে এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় ডাটা আদান প্রদান করা এটি অনেক টা ডাক বিভাগের মতই । ডাক বিভাগ যেমন চিঠি আদান প্রদান করে ইন্টারনেট তেমন সকল বারতা,ভিডিও কল,কল ইত্যাদিকে ডাটায় রূপান্তরিত করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছে দেয় ।
প্যাকেট সুইচিংঃবেশিরভাগ ইন্টারনেট ডাটা বহন করা হয়ে থাকে সম্পূর্ণ নতুন এক পদ্ধতিতে যার নাম হলো প্যাকেট সুইচিং। মনে করুন আপনি আপনার কোন আমেরিকান বন্ধুকে ইমেইল পাঠাতে চাচ্ছেন। তো এখানে আপনার বন্ধু এবং আপনাকে সরাসরি সংযুক্ত থাকার কোন প্রয়োজন নেই এই সম্পূর্ণ মেইলটি একবারে পাবার জন্য। প্যাকেট সুইচিং এ আপনার মেইলটি পাঠানোর পরে তা অনেক গুলো খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। আর এই প্রত্যেকটি খণ্ডকে বলা হয়ে থাকে প্যাকেটস। প্রত্যেকটি প্যাকেটের গায়ে ট্যাগ করা থাকে যে তাদের কোথায় যেতে হবে এবং তারা আলদা আলদা পথে ভ্রমণ করতে পারে। খণ্ডগুলো যখন তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যায় তখন সেগুলো আবার একত্রিত হয়ে যায়, যাতে তা মেইল রূপে প্রদর্শিত হতে পারে।
মনে করুন আপনি এক বস্তা চাল আর এক বস্তা গম ঢাকায় পাঠালেন , তো চাল টা ট্রেনে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে আর গম তা বাসে করে , দেখুন দুটো পন্যের গমন পথ আলাদা কিন্তু গন্তব্য এক । যখন গন্তব্যে পৌছোয় তখন তা একসাথে হয়ে পন্যের প্রাপকের নিকট চলে যায় । ঠিক তেমনি একটি মেইলের কয়েকশত খন্ড হয় এবং তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে আপনার বন্ধুর নিকট চলে যায় । ব্যাপারটা এমন হতে পারে , আপনি ঢাকায় আপনার বন্ধু কে মেইল পাঠালেন এবং চিটাগং বসে আছেন । আপনি কি ভাবছেন চিটাগং থেকে সরাসরি মেইলটি ঢাকায় চলে যাবে ? উত্তরঃ না । আপনার পাঠানো মেইলটি অযুত নিযুত ভাগ হয়ে লক্ষ লক্ষ প্যাকেটে পরিণত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ক্যাবল লাইন পার হয়ে ঢাকায় আপনার বন্ধুর নিকট যাবে । কি মাথা ঘুরে গেলো তো ?
পুরো ইন্টারনেট জুড়ে অযুত নিযুত মিলিয়ন কম্পিউটার ডিভাইস রয়েছে। কিন্তু এরা প্রত্যেকেই কিন্তু একই কাজ করে না। এদের মধ্যে কিছু কম্পিউটার শুধু তথ্য সংগ্রহ করে রাখে এবং কোন তথ্য কোথাও থেকে অনুরোধ করা হলে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর এই মেশিন গুলোকে বলা হয় সার্ভার। যে মেশিন গুলো কোন ডকুমেন্ট স্টোর করে রাখে তাদের বলা হয় ফাইল সার্ভার, যে সার্ভার গুলো আপনার আমার মেইল ধারণ করে রাখে, এদের বলা হয় মেইল সার্ভার। এবং যে সার্ভার গুলো ওয়েবপেজ ধারণ করে রাখে তাদের বলা হয় ওয়েব সার্ভার। ইন্টারনেটে অনেক অনেক মিলিয়ন মিলিয়ন সার্ভার রয়েছে।
যে কম্পিউটার গুলো সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে এদের বলা হয় ক্লায়েন্ট কম্পিউটার। আপনি যখন মেইল চেক করার জন্য ইন্টারনেটে প্রবেশ করেন তখন আপনার কম্পিউটারটি হলো ক্লায়েন্ট, আপনার আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) হলো সার্ভার এবং মেইলটি আসে মেইল সার্ভার থেকে। ইন্টারনেটে সার্ভারের তুলনায় ক্লায়েন্টের সংখ্যা বেশি, প্রায় বিলিয়ন খানেকের বেশি।
যখন দুটি কম্পিউটার একে অপরের সাথে তথ্য আদান প্রদান করতে ব্যস্ত থাকে তখন তাকে বলা হয়ে থাকে পিরস (Peers)। আপনি যদি আপনার বন্ধুর সাথে ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং করেন বা ফটো আদান প্রদান করেন তবে এটি হলো পির টু পির [peer-to-peer] [P2P] কমুনিকেসন। পি টু পি তে কখনো আপনার কম্পিউটার ক্লায়েন্ট হিসেবে আচরন করে আবার কখনো আপনার কম্পিউটার সার্ভার হসেবে আচরন করে। মনে করুন আপনি আপনার বন্ধুকে ফটো সেন্ড করলেন, তখন আপনার কম্পিউটার সার্ভার হিসেবে কাজ করলো (ফটো সেন্ড করলো)। এবং আপনার বন্ধুর কম্পিউটার ক্লায়েন্ট হিসেবে কাজ করবে (ফটো অ্যাক্সেস করবে)। আবার আপনার বন্ধু ফটো সেন্ড করলে তার কম্পিউটার সার্ভার হিসেবে কাজ করবে (ফটো সেন্ড করলো) আর আপনার কম্পিউটার এবার ক্লায়েন্ট হিসেবে কাজ করবে (ফটো অ্যাক্সেস করবে)।
শুধু সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট ছাড়াও আরেকটি মধ্যম কম্পিউটার রয়েছে যা ইন্টারনেটের আরেকটি অংশ। আর এর নাম হলো রাউটার। এটি শুধু আলাদা সিস্টেমের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে থাকে। আপনার বাড়িতে বা স্কুলে বা অফিসে যদি একাধিক কম্পিউটার থাকে তবে রাউটার সকলকে একত্রিত করে ইন্টারনেটে কানেক্ট করতে সাহায্য করে।
ইন্টারনেটের প্রতি কিন্তু কারো কোনো কন্ট্রোল নেই তাহলে কিভাবে আপনার মেইলটি একদম সঠিক গন্তব্যে পৌছায় ? আসুন জেনে নেই , টিসিপি/আইপি , টিসিপি মানে হচ্ছে ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রটোকল আর আইপি মানে হচ্ছে ইন্টারনেট প্রোটোকল । আমাদের সবার ডিভাইসেই আলাদা আলাদা আইপি আছে , বিশ্বের লক্ষ কোটি বিলিয়ন বিলিয়ন ডিভাইসের আলাদা আলাদা সতন্ত্র আইপি ঠিকানা আছে , যা খুব সহজেই প্রত্যেক টা মেশিনের পরিচয় সনাক্ত করে । যেমন আপনি একটি রবি নাম্বারে ফোন দিবেন সবার নাম্বারই কিন্তু আলাদা সে জন্যই একজনের ফোন অন্যকারো কাছে যায়না । ঠিক এখানে আইপি এড্রেস ও একইন রকম কাজ করে থাকে ।
ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রটোকল নিশ্চিত করে কিভাবে এক আইপি থেকে আরেক আইপি তে বার্তা পাঠাবে ।
আজকের মত এখানেই , অনুগ্রহ করে মতামত দিন ।
যে কোনো প্রকার মতামত নিচের ফেইসবুক মতামত অপশন থেকে দিতে পারবেন ।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল যেখানে প্রায় হাজার খানেক ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে যা দেখে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং , ভিডিও ইডিটিং (এডোব প্রিমিয়ার প্রো ) এবং অফিস ম্যানেজমেন্টের কাজ বিণামূল্যে ফুল কোর্স করতে পারবেন । ইউটিউব চ্যানেল থেকে ঘুরে আসতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।
কিভাবে ব্লগিং করে আয় করবেন তার বিস্তারিত ভিডিও টিউটোরিয়াল পেতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।
কিভাবে ব্লগিং করে আয় করবেন তার বিস্তারিত ভিডিও টিউটোরিয়াল পেতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।
ফ্রী তে পেওনিওর মাস্টার কার্ড পেতে এবং সেই সাথে ২৫ ডলার ফ্রী পেতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।
এডসেন্সের বিকল্প সেরা সাইট এর সম্বন্ধে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।
আমাদের ফেইসবুক পেইজে জয়েন করতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।
0 comments:
Post a Comment